ইলুমিনাতি পর্ব - ১১
ইলুমিনাতি পার্ট - ১১ (পানি নিয়ে যুদ্ধ ও ষড়যন্ত্র)
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানঃ বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের বেশির ভাগ নদী এসেছে ভারত থেকে। ভারত সেগুলোর উপর ড্যাম তৈরি করছে। ভারতে নির্মিত ফারাক্কা ড্যাম এর কারণে বাংলাদেশের উপর প্রভাব সম্পর্কে আর নতুন করে লিখার কিছু নেই। আর বাংলাদেশের সাথে তিস্তার পানি চুক্তি নিয়ে চলমান নাটক সম্পর্কেও সবাই ওয়াকিবহাল।
চন্নাব নদীর উপর বাগলিহার ড্যাম নির্মাণ এবং নিলাম নদীর উপর কাসনগঙ্গা ড্যাম নির্মাণের মাধ্যমে ভারত পাকিস্তানের পানির গতিরোধ করে ভূখণ্ডটির পানির উপর নিয়ন্ত্রনের প্রয়াস সম্পন্ন করেছে।
২৯ শে ডিসেম্বর ২০১৩ সালে বাংলাদেশের ‘আমাদের সময়’ নামে এক দৈনিকে “পানি নিয়ে সংঘাতে জড়াবে ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশ” নামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে প্রতিবেদনটি নিন্মরূপঃ
“সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ কিংবা ভিন্ন কোন সমস্যা নয়, পানির সংকটই দক্ষিন এশিয়ার সবচেয়ে বড় সমস্যায় পরিণত হতে যাচ্ছে। এই অঞ্চলের বাংলাদেশ ও পাকিস্তান প্রায় সমানভাবেই পানির সংকটের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে পানির অধিকার থেকে একইভাবে বঞ্চিত করে আসছে ভারত।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী ২০২৫ সালের মধ্যেই পাকিস্তান পানির সংকটে পড়বে। এছাড়া ২০৫০ সালের মধ্যে দেশটি পানির অভাবগ্রস্থ দেশে পরিণত হবে। একইভাবে, বাংলাদেশেও ভূ-নিম্নস্থ পানির মজুদ কমছে। ভারত-বাংলাদেশের অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টন সুষম না হওয়া, বাংলাদেশের প্রধান নদীগুলোর স্বাভাবিক প্রবাহ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে অনেক আগেই। ফলে, বাংলাদেশও পানির তীব্র সংকটের মধ্যে পড়তে যাচ্ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের পানির সহজলভ্যতা প্রায় ৩০ ভাগ কমে যাবে। আন্তর্জাতিক নদীগুলোর পানি অবৈধভাবে দখলে রাখা ভারতেও পানির সংকট সৃষ্টি হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে দেশটিতে বর্তমান সময়ের তুলনায় পানির সহজলভ্যতা ২৮ ভাগ কমে যাবে। একারণে, পানির অধিকার নিয়ে বাংলাদেশ-ভারত ও ভারত-পাকিস্তান সংকট আরও ঘনীভূত হবে।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের কোটি কোটি মানুষের পানির অধিকার পদদলিত করে ভারত আন্তর্জাতিক নদীগুলোর পানি নিয়ন্ত্রণে একাধিপত্য বজায় রাখছে। পাকিস্তানের সাথে অভিন্ন নদীগুলো থেকে অধিক পরিমাণ পানি ব্যবহার ছাড়াও পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণেও চালকের ভূমিকা পালন করছে ভারত। একই দৃশ্য বিদ্যমান বাংলাদেশের সাথে ভারতের অভিন্ন নদীগুলোর প্রবাহের ক্ষেত্রেও। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ১৯৬০ সালে স্বাক্ষর হওয়া চুক্তির মাধ্যমে ভারত বিয়াস, রাভী ও সুলেজ নদীর ওপর কর্তৃত্ব পায়। অপরদিকে পাকিস্তান সিন্ধু, চেনাব ও ঝেলুম নদীর কর্তৃত্ব পায়। কিন্তু সবগুলো নদীর উৎপত্তিস্থল ভারতে হওয়ায় তারা পানি প্রবাহের প্রায় পুরোটাই নিয়ন্ত্রন করে। একারণে, পাকিস্তান সব সময়ই পানির ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পাকিস্তান বারবার আন্তর্জাতিক সংস্থা ও কূটনীতিক সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করলেও তারা নিজেদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
একইভাবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৫৪ টি অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন নিয়েও রয়েছে সমস্যা। পাকিস্তানের মতোই বাংলাদেশের নদীগুলোতেও পানি প্রবাহে ভারতের অবৈধ নিয়ন্ত্রনের কারণে পানির সংকট সৃষ্টি হয়েছে। অনেকগুলো অভিন্ন নদী মৃত বা অর্ধ মৃত অবস্থায় আছে।
পানির ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ উভয় দেশের অর্থনীতি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। উভয় দেশেরই কৃষি ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে প্রতি নিয়ত। ফলে, সামাজিক স্থিতিশীলতা চরম হুমকির মুখোমুখি হচ্ছে। একারনেই, আশংকা করা হচ্ছে, পানির সংকট ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের জন্য কূটনৈতিক লড়াই ও সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার সবচেয়ে বড় কারণে পরিণত হবে।”
আর দাজ্জালের সঙ্গে যুদ্ধের ক্ষেত্রে এই অঞ্চলের মুজাহিদদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
হযরত নাহীক ইবনে সারীম (রাঃ) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “নিঃসন্দেহে তোমরা মুশরিকদের (মূর্তিপূজারীদের) সঙ্গে যুদ্ধ করবে। এমনকি এই যুদ্ধে তোমাদের বেঁচে যাওয়া মুজাহিদরা উর্দুন (জর্ডান) নদীর তীরে দাজ্জালের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। এই যুদ্ধে তোমরা পূর্ব দিকে অবস্থান গ্রহণ করবে আর দাজ্জালের অবস্থান হবে পশ্চিম দিকে। ” (আল ইসাবা,খণ্ড ৬,পৃষ্ঠা ৪৭৬)
এখানে মুশরিকদের দ্বারা উদ্দেশ্য উপমহাদেশের মূর্তিপূজারী জাতি। তার মানে এটি সেই যুদ্ধ – “গাজওয়াতুল হিন্দ”, যেখানে মুজাহিদরা এই উপমহাদেশে আক্রমণ চালাবে,আল্লাহ তাদেরকে বিজয় দান করবেন,ক্ষমা করে দেবেন, বেঁচে যাওয়া মুজাহিদরা জেরুজালেমে ফিরে যাবে এবং সেখানে ঈসা (আঃ) সাক্ষাত পাবে এবং ঈসা (আঃ) নেতৃত্বে দাজ্জালের বিরুদ্ধে মহাযুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে। (সুনানে নাসায়ী-খণ্ড ৬,পৃষ্ঠা ৪২;আল ফিতান-খণ্ড ১,পৃষ্ঠা ৪০৯ ও ৪১০)
উপরের ঘটনাগুলো ছাড়াও বর্তমানে বাংলাদেশে পানি নিয়ে আরো কিছু ঘটনা ঘটছে। বিশেষত রাজধানী ঢাকার পানি সরবরাহ প্রতিষ্ঠান ওয়াসাকে নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে চলা কাহিনীটা একটু তুলে ধরি। বলা হচ্ছে ওয়াসার পানি নিরাপদ না। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা কি বলছেন এই ব্যাপারে? বুয়েটের প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. আশরাফ আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "এমনিতে ঢাকা ওয়াসার পানি মূল উৎসে নিরাপদ। কিন্তু বিতরণ লাইন এবং বাড়ির ওভারহেড ট্যাংকে এসে পানি দূষিত হয়।" অর্থাৎ ওয়াসার পানির মূল সমস্যা রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির সময় দেখা যায়। একদল অন্য দলের পাইপ ছিদ্র করে ফেলে যার ফলে কখনো সুয়ারেজের পানি আবার কখনো বৃষ্টির পানি ঢুকে ময়লা হয়ে যায়। আর সবচেয়ে লক্ষণীয় ব্যাপার হল ওয়াসার পানির এই ধূম্রজালকে কেন্দ্র করে ইহুদীবাদী কোম্পানী ইউনিলিভারের পিওরইট ব্যাপক ব্যবসা শুরু করে দিয়েছে। অর্থাৎ ওয়াসার বিরুদ্ধে পরিকল্পিত "মিডিয়া ক্যু" সৃষ্টি করে বাংলাদেশের পানির উৎসকে জায়োনিস্টরা নিজেদের আয়ত্ত্বে নিয়ে নিচ্ছে। অথচ সমীকরণ বলছে বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম নিরাপদ পানির দেশ। এই ক্যু বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় শুরু হলেও খুব শীঘ্রই তা পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়বে।
এখন প্রশ্ন থাকল,দাজ্জাল পাহাড়ি অঞ্চলগুলোর অসংখ্য কূপ ও নালা কীভাবে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হবে? এই প্রশ্নের উত্তর বুঝতে হলে একটি বিষয় মস্তিষ্কে বসিয়ে নিতে হবে যে,দাজ্জালের ফেতিনা পার্বত্য অঞ্চলে কম হবে এবং যেসব পাহাড় আধুনিক জাহেলি সভ্যতা থেকে পুরোপুরি পবিত্র হবে দাজ্জালের ফেতনা সেখানে পৌছাবে না। কাজেই পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষ পানির প্রশ্নে কম দুর্ভোগ পোহাবে। তার অর্থ এই নয় যে,দাজ্জালি শক্তিগুলো বসে রয়েছে। বরং তাদের সর্বশক্তি বর্তমানে পাহাড়ি অঞ্চলগুলোর পানির উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত আছে। আপনি ইতিহাসে পড়ে থাকবেন,এমনকি মরু ও পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে দেখেও থাকবেন যে,যেসব অঞ্চলে পানির প্রাকৃতিক ভান্ডার যেমন- নদী,কূপ কিংবা বরফীয় নালা প্রবাহমানী আছে সেসব অঞ্চলে বসতি গড়ে উঠছে। আগে মানুষ রাস্তা ও হাট-বাজার দেখে বসতি গড়ত না। মানুষ বসতি গড়ত পানির উপস্থিতি দেখে,যদিও সেটা হত পাহাড়ের চূড়া। কিন্তু এখন সে চিত্র পালটে গেছে। এখন সেসব এলাকায় বসতি গড়ায় প্রাধান্য দেয়া হয় যেখানে মানুষের ভিড়-ভাট্টা বেশি। অর্থাৎ এখন বসতি গড়ার ক্ষেত্রর প্রথব বিবেচ্য বিষয় প্রাকৃতিক পানির ভান্ডার নয় বরং মানুষ পানির জন্য সেইসব ট্যাংকগুলোর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে,যেগুলো বিভিন্ন রাষ্ট্রের অর্থায়নে সেসব এলাকায় স্থাপিত হচ্ছে। এটা হল চিন্তার সেই ব্যাপক পরিবর্তন, যা আন্তর্জাতিক ইহুদী চক্র পাহাড়ি লোকদের মাঝে প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছে। যাতে পাহাড়ি লোকেরা প্রাকৃতিক পানির উপর নির্ভরশীলতা ত্যাগ করে আর বোতল বা ট্যাংকজাত পানির উপর নির্ভরশীল হয়। চিন্তার এই বিপ্লবের লক্ষ্যে পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে পশ্চিমাদের অর্থায়নে পরিচালিত এনজিও গুলোর পক্ষ থেকে ব্যাপক চেষ্টা-প্রচেষ্টা চলছে। এসকল প্রচেষ্টার মূল লক্ষ্য দূর-দূরান্তের পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে আধুনিক জাহেলি সভ্যতার ক্রিয়া পৌছে দেয়া। এর জন্য আন্তর্জাতিক ইহুদী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশেষ বরাদ্দ আছে,যা পর্যটন,উন্নয়ন, নারীশিক্ষা ও আঞ্চলিক সংস্কৃতির বিস্তার ও প্রসারের নামে চালিয়ে দেয়া হয়। আর এই পাহাড়ি অঞ্চলগুলোর সড়ক ও বিদ্যুতের সরবরাহ আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বিশেষ নির্দেশনায় হয়ে থাকে। এই অঞ্চলগুলোতে বিদ্যমান কূপগুলোর পানির ব্যাপারে এই প্রোপাগান্ডা শুরু হয়ে গেছে যে,এই পানি পান করলে অসুখ হয়। এভাবেই তারা পাহাড়ে বসবাসরত লোকদের সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যসম্মত পানি থেকে বঞ্চিত করে নেসলের বোতলজাত পুরনো পানিতে অভ্যস্ত করে তোলার চেষ্টা করছে।
আপনারা হয়তো জানেন ২০০৩ সালকে আন্তর্জাতিক টাটকা পানির বছর হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। আর তাদের দৃষ্টিতে টাটকা পানির সংজ্ঞা হল সেই পানি,যা বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। এই দিবসের অধীনে অত্যন্ত জোরেশোরে প্রচারণা চালানো হয়েছিল যে পৃথিবী থেকে পানযোগ্য পানি নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে।
বিস্মিত হতে হয় লেখাপড়া জানা সেই সব লোকদের বিবেকের জন্য, যারা পার্বত্যাঞ্চলগুলোতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কূপের পানির বদলে বোতলাজাত পানি ব্যবহার করেন। অথচ কূপের পানি শুধু পানিই নয়,তা পেটের পীড়ার জন্যও অধিক কার্যকরী। কেন বোতলজাত বা সাপ্লাই পানি ব্যবহার করেন এর উত্তরে বলা হয়,ডাক্তার বলেছেন কূপের পানি ক্ষতিকর। যখন জানতে চাওয়া হয় কোন ডক্টর বলেছেন? তখন উত্তর আসে,ডব্লিওএইচও'র ডক্টর। এখন আমার মত স্বল্প জ্ঞানের লোক কী করে জানব,ডব্লিওএইচও'র (WHO) কীসের সংক্ষেপ? "ওয়ার্ল্ড হিব্রু অর্গানাইজেশন" নাকি 'ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন"? আফসোস, এই লোকগুলো যদি জানতো,ডব্লিওএইচও' র ডক্টরগণ প্রত্যেক সেই বস্তুর ব্যাপারেই প্রচারণা চালান,যেগুলো ইহুদী পুঁজিপতিদের স্বার্থের অনুকূল!!
No comments