ইলুমিনাতি পর্ব - ৩
(ইলুমিনাতি ইন লাইফ স্টাইল)
আগের দুই পর্বের ধারাবাহিকতায় আজ আপনাদের সামনে তুলে ধরবো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ইলুমিনাতি আমাদের কিভাবে গ্রাস করে আছে সেইসব তথ্য। তবে তার আগে আপনাদেরকে একটু ইতিহাসে ঘুরিয়ে নিয়ে
আসি। আপনারা অনেকেই ডানো,ড্যানিশের পাশাপাশি "রেড কাউ" নামক এক গুঁড়োদুধের প্রোডাক্ট চেনেন। অনেকে ব্যবহারও করেন। এই প্রোডাক্টের জারে একটা 'লাল গরু'র ছবি থাকে। কখনো কি আপনার অবচেতন মনে এই প্রশ্নটা জেগেছিল যে,গরুটা 'লাল' কেন?? আমরা তো সাধারণত কালো,সাদা,সাদা-কালো বা হালকা রঙিন গরু দেখে থাকি। কিন্তু একেবারে লাল কালারের গরু কি আদৌ হয়???
ইহুদীদের বিকৃত বাইবেলের ভাষ্যমতে, কিয়ামতের ঠিক পূর্বে একটি লাল গাভী জন্ম নিবে। সেই লাল গাভী জন্ম নেবার পর তিন বছর বয়সে উপনীত হলে সেটিকে আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে সেই ছাই মেখে ইহুদী সম্প্রদায় পবিত্রতা অর্জন করবে। অন্যথায় তারা পবিত্র হবে না। তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী লাল গাভী বের হবার পরই বর্তমান বাইতুল মুকাদ্দাস মসজিদ ও The Dome of the Rock ভেঙে তারা সেখানে একটি হাইকল বা উপাসনালয় নির্মাণ করবে বা তাদের ধারণা অনুসারে সেটি মাটির তলায় প্রোথিত আছে সেটা মাটি খুঁড়ে উত্তোলন করবে। এটা হবে তৃতীয় হাইকল আর এই হাইকলে শুধু ইহুদীরাই উপাসনা করতে পারবে অন্য ধর্মাবলম্বীরা নয়। উল্লেখ্য যে,এর আগে আরো দুইবার হাইকল নির্মাণ করা হয়েছিল। প্রথমবার বানিয়েছিলেন সুলাইমান (আ:)। কিন্তু সেগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছিল। ইহুদীরা বিশ্বের সর্বত্র এই লাল গাভী হন্য হয়ে খুঁজে ফিরছে। এবং অবশেষে তারা খুঁজেও পেয়েছে। আমেরিকার নিউ জার্সির এক গো-খামারে। কিন্তু গাভীর মালিক সেটি কোনমতেই ইহুদীদের কাছে বিক্রি করতে রাজি নয়। এই লাল গাভীকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে নতুন উন্মাদনার সৃষ্টি হয়েছে। আর একারণেই আপনি প্রত্যেকটা ইসরাইলি দুগ্ধজাতীয় পণ্যে রেড কাউ দেখতে পাবেন।
এবার চলুন মূল টপিকে ফিরে আস যাক। মানে আমাদের লাইফস্টাইল কিভাবে তাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে সেটা জানি।
⭕ড্রেসআপ : প্রথমেই আসি পোশাক- আশাকের দিকে। ইদানীং কালো-সাদা হুডি জ্যাকেটের খুব প্রচলন চলছে। যেগুলো টুপিসহ থাকে। এই জ্যাকেটগুলো যখন কেউ টুপিসহ পড়ে তখন তাকে কেমন লাগে দেখতে? অনেক মুভিতে হিরোরা এই হুডি পড়ে আলো-আঁধারীর মধ্যে হঠাৎ উদয় হয় লুসিফারের মত। এই হুডিটা আসলে ইলুমিনাতিদের শয়তান 'বাপহমেট' এর পূজায় ব্যবহৃত একটি বিশেষ পোশাক। পূজার সময় এই পোশাক পরিধান করে মাথায় হুডি চাপিয়ে তারা ঠিক সেভাবেই ধীরে ধীরে হেলেদুলে মূর্তির সামনে আসে যেটাকে আমরা ফ্যাশন হিসেবে করে থাকি। শুধু এইটুকুই নয়, এই হুডি গুলোর মধ্যে অনেক কোম্পানীর সাইন,লোগো থাকে যেগুলো ইলুমিনাতি সাইন ইনডিকেট করে। খুব সূক্ষ্মভাবে ইলুমিনাতির এক চোখ বিশিষ্ট ট্রায়াঙ্গল ফুটিয়ে তোলা হয় যেটা আপনি সাধারণ চোখে দেখেন না কিন্তু আপনার সাবকন্সিয়াস মাইন্ড ঠিকই ধরে ফেলে। এছাড়াও অন্য সাধারণ পোশাকগুলোতেও তাদের সাইন,কোড থাকে। সাইন আপনাদের বারবার দেখিয়েছি। এখন বলে দেই ওদের গোপন কোড কি কি। "R.I.P","Do Not Trust Anyone ",Trust No 1", "OBEY DASH for CHAOS", কংকালের খুলী,পিরামিডের ছবি কিংবা এক চোখ এগুলোই তাদের কোড। আর তাই আপনি অনেক পোশাকেই এইসব সিম্বল-কোড দেখতে পাবেন। কারণ সমগ্র দুনিয়ার পোশাক কোম্পানীগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণে। ফ্যাশনের নামে এই পোশাকগুলো গায়ে চাপাচ্ছেন আর লুসিফার/দাজ্জাল/নমরুদ-ফেরাউনকে আল্লাহ হিসেবে মেনে নিয়ে তার দাসত্ব করছেন। ওগুলো পড়েই নামাজে দাঁড়াচ্ছেন, সিজদা দিচ্ছেন। সুন্নাত উল্টিয়ে আজ আমার মুসলিম ভাইয়েরা টাখনুর নিচে আর বোনেরা টাখনুর উপরে পায়জামা পড়েন। মানে সুন্নাত ভাগাভাগি করে নিয়েছেন আর কি!!!
⭕হেয়ার স্টাইল এন্ড হেয়ার কালার : আহ! কত নিত্যনতুন হেয়ার স্টাইলের জন্য পার্লারে কতই না সিরিয়াল দিয়েছেন। 'v' কাট,'u' কাট,লেয়ার কাট, অমুক কাট তমুক কাট। সোজা চুল কার্লি করছেন তো কার্লি চুল সোজা। শুধু কাট দিয়েই আবার তৃপ্ত হন না অদ্ভুত অদ্ভুত সব কালারও করেন। এই কাট আর কালারগুলো কোথা থেকে পেলেন? অমুক সেলিব্রিটির ফ্যাশনে। শুধু মেয়েরাই নয়,আজকালকার ছেলেরাও এক্ষেত্রে কম যায় না। প্রিয় ভাই বোনেরা, একটা কথা মাথায় রাখবেন - "সেলিব্রিটি মানেই স্টার,স্টার মানেই পেন্টাগ্রাম,পেন্টাগ্রাম মানেই বিফরমেটেড পিরামিড সাইন,বিফরমেটেড মানেই ইলুমিনাতি আর ইলুমিনাতি মানেই দাজ্জাল"।
⭕ড্রিংক্স ও খাবার : শুরুতেই আপনাদের রেড কাউ এর ইতিহাস বলেছি। রেড কাউ,রেড বুল,ডানো,ড্যানিশ,নেসলে,ম্যাগি,পেপসি,রকস্টার,পিজ্জাহাট এগুলোর লোগো খেয়াল করুন। এর কোনটা পিরামিড কোনটা মার্ক অফ দ্য বিস্ট সাইন সম্বলিত। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে মার্ক অফ দ্য বিস্ট কোনটা? হ্যা "666" বা পরপর ৩ টা ৬। কিছু কিছু পানীয়ের বোতলের গায়ে দেখবেন ৩ টা পরপর 'লাল' বা 'সবুজ' রঙের দাগ। দেখে মনে হবে যেন রঙগুলো গড়িয়ে পড়ছে। এগুলোও মার্ক অফ দ্য বিস্টকে নির্দেশ করে। এখানে আপনাদের আরেকটু স্মরণ করিয়ে দেই রাসূল (সা:) বলেছেন -" দাজ্জাল হবে স্থূলকায় লাল বর্ণের,আর তার চোখ হবে হালকা সবুজ সীসার মত,মাথার চুল হবে কোঁকড়া ও এলোমেলো।"(সহীহ মুসলিম)
⭕ ব্র্যান্ড ও কোম্পানী : FedEx,Amazon, Gillette, LG, Continental, Unilever, CocaCola, Pinterest,Toyota,Pizza Hut,adidas,apex....... কয়টা নাম বলবো! (এই ব্র্যান্ডগুলোর লোগো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে গুগল করতে পারেন The secret meanings behind 40 brand logos এ)
⭕বিভিন্ন প্রয়োজনীয় এপস : গুগল, গুগল ক্রোম, জিপিএস, জিমেইল, জি-ম্যাপস, গুগল ড্রাইভ, ইউটিউব, ফেসবুক,টুইটার,প্লে স্টোর, ম্যাক্স প্লেয়ার সহ সব প্রয়োজনীয় এপসেও আছে ইলুমিনাতি-ফ্রিম্যাসন্স সাইন ও সিম্বলস। এর মধ্যে ফেসবুক বাদে গুগলের সব এপসে পিরামিড আছে। কোনটায় একটা আবার কোনটায় একাধিক পিরামিড যেগুলোর গোপন অর্থ হল "Sigils of Lucifer" অর্থাৎ শয়তানের আন্ডারগ্রাউন্ড রাস্তা। আপনাদের হয়তো এবার মনে প্রশ্ন জেগেছে গুগলের নাহয় পিরামিড আছে কিন্তু ফেসবুকে তো পিরামিড নেই? ফেসবুকের লোগোটা লক্ষ্য করুন। স্মল এফ। বিগ এফ কেন হল না? কারণ স্মল 'f' এর আকৃতিটা masonic "Tubal cone(cain)" symbol এর মত। যেটা ইলুমিনাতি ফ্রিম্যাসন্সদের আরেকটি সাইন। (সব এপসের লোগো ও তাদের সিক্রেট মিনিং ছবিতে দেখুন)।
⭕ইমোজি : এবার আসুন বহুল ব্যবহৃত ইমোজির অবস্থা দেখি। যেটা ছাড়া আমরা আমাদের অনুভূতি ঠিকভাবে বুঝাতেই পারি না। আমিও এর ব্যতিক্রম নই। 😈👿👹👺✌️👌🙊 এগুলো সবই ইলুমিনাতি সিম্বল। শুধু এগুলোই নয় আরো আছে (ছবিতে দেখুন), ম্যাক্সিমাম স্টিকারই ম্যাসনিক। সুতরাং এগুলো যত পারুন এভয়েড করুন।
⭕উৎসব : হ্যালোউইন, থ্যাংকসগিভিং ডে,ভ্যালেন্টাইনস ডে,থার্টিফার্স্ট নাইট,পহেলা বৈশাখ,সাকরাইন এগুলো সবই সেটানিজম কালচার। আগে আমাদের দেশে হ্যালোউইন পালন করা হত না। এখন দেখি এটাও পালন হচ্ছে বিশেষ বিশেষ স্থানে। হ্যালোউইন সম্পর্কে সবাই জানেন। পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রায় কিম্ভুতকিমাকার দানব আর কদাকার চেহারার পশুপাখির প্রতিকৃতি বানিয়ে মঙ্গল কামনা করা হয় যেটা হুট করেই হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি হয়ে গেছে!! আমার বুঝে আসে না, এইসব দানবগুলো আর অবলা জীবগুলো কি করে সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি "আশরাফুল মাখলুকাতের " মঙ্গল সাধন করে!!! কারো মনে প্রশ্ন জাগতেও পারে হ্যালোউইন-পহেলা বৈশাখ বুঝলাম কিন্তু ভ্যালেন্টাইনস ডে কি দোষ করলো??(যতই হোক সামনেই ভালোবাসার দিন আসতেছে!...) আগেই বলেছি ইলুমিনাতিদের একটা উদ্দেশ্য হল অবাধ যৌনাচার-অশ্লীলতা বিস্তার করা। আর তাদের সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য এইসব তথাকথিত ভালোবাসা দিবস আর থার্টিফার্স্ট নাইটের পার্টি থেকে ভালো আর কি হতে পারে।
⭕গেম ও খেলার সামগ্রী : সবরকমের খেলার সামগ্রী বিশেষত বাচ্চাদের জিনিসে দেখবেন কোন না কোনভাবে ইলুমিনাতি সিম্বল আছেই। আর এখনকার মোবাইল-কম্পিউটার গেমসগুলোও একই কিসিমের। ফুটবলেও দেখবেন ওদের সাইন। আরেকটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য খেলা হল দাবা যেটাকে তারা আমাদের কাছে উপস্থাপন করে বুদ্ধির খেলা হিসেবে। দাবা খেলার বোর্ড কেন সাদা-কালো হয়,কেন অন্য কালারের হয় না?? সেই একই কথা - যেমন সাদা তেমন কালো,যেমন ভালো তেমনই মন্দ। আর একারণেই আপনি অনেক লজ কিংবা রিসোর্টে সাদা-কালো টাইলস দেখবেন যেগুলো আসলে ইলুমিনাতি-ফ্রিম্যাসন্সদের অবস্থানকে ইংগিত করে।
উপরের তথ্যগুলো পড়ার পড় এখন সবার মনে হয়তো একটা প্রশ্নই উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে - সবকিছুই তো ইলুমিনাতি তাহলে উপায় কি?? আপনাদের মত আমারো একই প্রশ্ন "উপায় কি"? যাই খাই, যাই করি,যাই পড়ি,যাই দেখি,যাই বলি সবই তো ইলুমিনাতি-সেটানিজম! উপায় একটাই আর তাহল যতটা সম্ভব এগুলো থেকে দূরে থাকা। আর যেসব থেকে যেমন এপসগুলো দূরে থাকা যায় না সেগুলোকে ভালো কাজে ব্যবহার করা। তাদের ছড়ানো অস্ত্র তাদের বিরুদ্ধেই কৌশলে ব্যবহার করা। আর দাজ্জাল থেকে বাঁচার জন্য "সূরা কাহফ" মুখস্ত করা। "যে ব্যক্তি সূরা কাহফের প্রথম ১০ আয়াত মুখস্ত রাখবে সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে মুক্ত থাকবে।"(বুখারী,মুসলিম,তিরমিযী) আল্লাহ আমাদের সবাইকে দাজ্জালের ফিতনা থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দিন আমীন।
No comments